গণতন্ত্রকে বলি দিয়ে বিজয়ের উৎসব করছে সরকার: রিজভী
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, জনগণ ও গণতন্ত্রকে বলি দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের জালিয়াতির ফল নিয়ে উৎসব আর উল্লাস করছে ক্ষমতাসীনরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি আদালতকে ব্যবহার করে তার এই একতরফা, জনগণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক মহাভোট ডাকাতির, মহাভোট জালিয়াতির নির্বাচন করেছে। তো সেটার তো একটা পার্ট হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কয়েকজন। সুতরাং এটা তো খুব সুস্পষ্ট, তারা তো সেই উৎসব করবেই। রিজভী বলেন, সারাদেশে অধিকাংশ আসনের অনেক কেন্দ্রে আগের রাতে ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছে। একারণে ভোটের দিন বহু কেন্দ্রে সকাল ১০/১১টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়। হাজার-হাজার ভোটার ভোট দিতে এসেও ভোট দিতে পারেননি। সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ খুব ধীরগতিতে করা হচ্ছিল। এর কারণ, শুরু থেকেই বাহির থেকে ভোটার আসার সময় পাশাপাশি ভেতরে ব্যালটে অবৈধ সিল মারার কাজ চলছিল। ভোটের আগের রাত পর্যন্ত পুলিশ/ডিবি/আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভূমিকায় বহু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ভোটের দিন এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি অথবা মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরপর বিভিন্নভাবে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢোকানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা ছাড়া উপরের সব কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল পুলিশ/ডিবি/আনসার ও বিভিন্ন স্তরের সিভিল প্রশাসন। এসব কিছু বন্ধ করতে ইসি শুধু যে কিছুই করেনি তা নয়, তারা সব আদেশ-নিয়ম এমনভাবে জারি করেছে যেন এসব কিছু নির্বিঘেœ নিখুঁতভাবে করা যেতে পারে। নির্বাচনের দিনের আগের কয়েক সপ্তাহে বিরোধীদের মিছিলে হামলা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে, মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে, নির্বাচন প্রচার-প্রচারণা অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ ডাকলে তারা আক্রান্তদেরই গ্রেফতার করেছে, মামলা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেরাই ওই কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি আরো বলেন, বহু প্রার্থীকে আহত করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, প্রচারণায় যেতে দেওয়া হয়নি, নির্মম-নির্যাতনের শিকার করা হয়েছে। অধিকাংশ আসনে প্রচারণা করতে দেওয়া হয়নি। পোস্টার টানাতে দেওয়া হয়নি, ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে, অনেকে বাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এতকিছুর পরও লাখ-লাখ ভোটার সাহস করে ভোট দিতে বেড়িয়েছিলেন, কিন্তু তাদের অধিকাংশ ভোট দিতে পারেননি। কারণ নির্বাচনটি ছিল সম্পূর্ণ প্রহসন, প্রতারণা আর জালিয়াতিতে পরিপূর্ণ। সরকার আর ইসির মিথ্যা আশ্বাসে সব দল নির্বাচনে এলো। কিন্তু পুলিশ, ডিবি, বিজিবি, র্যাব, বিচার বিভাগ, সিভিল প্রশাসন, দুদক আর নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ কাজে লাগিয়ে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এই নির্বাচন সংঘটিত করা হল। দেশ ও জাতির প্রতি এতোবড় প্রতারণা ও জালিয়াতির জন্য জনগণের আদালতে প্রকাশ্যে এগুলোর বিচার একদিন হবেই বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন রিজভী।